ডাইনোসর এর কথা চিন্তা করলে অনেকের মনে এই প্রশ্নটি আসতে পারে যে এতো বড় একটা প্রানীর ব্যাপারে কুরআনের কোথাও বলা হয়নি কেন? এই বিষয়টি সম্পর্কে একটি বিশদ বর্ণনা নিচে দেয়া হলো -
যেহেতু পবিত্র কুরআন থেকে ডাইনোসর সম্পর্কে কথা বলবো তাই সবার প্রথমে ডাইনোসর সম্পর্কে জানতে হবে বিশেষ করে ডাইনোসর কিভাবে মারা গিয়েছে তা জানতে হবে। (ডাইনোসর বিলুপ্তির কারণ)
পুরাজীববিদ স্যার রিচার্ড ওয়েন ১৮৪২ খ্রীষ্টাব্দে ডাইনোসরের আনুষ্ঠানিক নামকরণ করেন।ডাইনোসর শব্দটি গ্রিক δεινός (দেইনস, অর্থাৎ “ভীষণ” বা “ভয়াবহ”) এবং σαῦρος (সাউরোস, অর্থাৎ “গোধা” বা “গিরগিটি”) এই দু’টি শব্দ নিয়ে তৈরী হয়েছে।
ডাইনোসরেরা আজ থেকে প্রায় ২৩ কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলো এবং এরা প্রায় ১৭ কোটি বছর পৃথিবীতে রাজত্ব স্থাপন করে। ডাইনোসরের উচ্চতা ছিল প্রায় ৪০ ফুট অর্থাৎ একটি ডায়নোসর ছিলো একটি চারতলা বিল্ডিং এর সমান লম্বা এবং এর দৈর্ঘ্য ছিল ১৯০ ফুট অর্থাৎ একটি ১৯ তলা বিল্ডিং এর সমান। এর ওজন ছিল প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার কেজি।
যখন ১৭ কোটি বছর পার হলো অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৬ কোটি ৬০ লক্ষ বছর পূর্বে পৃথিবীতে একটি এস্টেরয়েড (Asteroid) আঘাত হানে। এস্টেরয়েড মানে হচ্ছে গ্রহাণু বা উল্কা। এই এস্টেরয়েড যখন পৃথিবীতে আঘাত হানে তখন এর প্রভাব পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।
এই উল্কা ছিল প্রায় ১৫ কিলোমিটার ব্যাস বিশিষ্ট এবং এটি আঘাত করে মেক্সিকোর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলেরএকটি উপদ্বীপে যার নাম ছিলো উকাটান উপদ্বীপ।এই উকাটান উপদ্বীপে উল্কাপিন্ডটি আঘাত হানার পর সেখানে একটি ১৮০কিলোমিটারের উল্কাখাত তৈরি হয় যেটি ছিলো প্রায় ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীর।
এই উল্কাপিন্ড যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে তখন এর গতিবেগ ছিল প্রায় ১ লক্ষ কিলোমিটার যার ফলস্বরূপ সেখানে আগুন ধরে যায়। যখন এই উল্কাপিন্ডটি পৃথিবীতে আঘাত হানে তখন পুরো পৃথিবীতে এর প্রভাব পড়ে। পৃথিবীতে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয় যার ফলে মাটির স্তূপের নিচে পরে সবগুলো ডাইনোসর মারা যায়। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে বাকি প্রজাতিগুলো বেঁচে যায় যেখানে সেগুলোর আগে মারা যাওয়ার কথা ছিল।
মোটামুটি ডায়নোসরের মৃত্যুর সারসংক্ষেপ হচ্ছে আকাশ থেকে একটি উল্কাপিন্ড বা গ্রহানু পৃথিবীকে আঘাত করে যার ফলে ডায়নোসরের মৃত্যু হয় এবং ডায়নোসর ছিলো পৃথিবীতে রাজত্ব স্থাপনকারী একটি প্রজাতি।(why did allah kill the dinosaurs)
তাহলে এখন দেখা যাক পবিত্র কুরআনে এর সম্পর্কে কি বলা আছে-(ডাইনোসর রহস্য)
পবিত্র কুরআনে সূরা সাবার ৯ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন,
اَفَلَمۡ یَرَوۡا اِلٰی مَا بَیۡنَ اَیۡدِیۡہِمۡ وَمَا خَلۡفَہُمۡ مِّنَ السَّمَآءِ وَالۡاَرۡضِ ؕ اِنۡ نَّشَاۡ نَخۡسِفۡ بِہِمُ الۡاَرۡضَ اَوۡ نُسۡقِطۡ عَلَیۡہِمۡ کِسَفًا مِّنَ السَّمَآءِ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّکُلِّ عَبۡدٍ مُّنِیۡبٍ ٪
তারা কি তাদের সামনের ও পশ্চাতের আকাশ ও পৃথিবীর প্রতি লক্ষ্য করে না? আমি ইচ্ছা করলে তাদের সহ ভূমি ধসিয়ে দেব অথবা আকাশের কোন খন্ড তাদের উপর পতিত করব। আল্লাহ অভিমুখী প্রত্যেক বান্দার জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।
এই আয়াতে দেখা যায়, আল্লাহ তা'য়ালা তার বান্দাদেরকে বলছেন, তোমরা কি লক্ষ্য করে দেখছোনা তোমাদের সামনে ও পিছনে আকাশ ও জমিনে যা কিছু আছে।আমিতো চাইলে অর্থাৎ আল্লাহ তা'য়ালা চাইলে ভূমিসহ ধসিয়ে দিতে পারেন অথবা আসমান থেকে এক খন্ড নিক্ষেপ করতে পারেন যেটা আল্লাহ তা'য়ালা ঐ ডায়নোসরের ক্ষেত্রে করেছিলেন। তিনি আসমান থেকে একখন্ড অর্থাৎ একটি উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করেছিলেন এবং যার ফলে তারা ভূমিসহ ধসে গিয়েছিল। এর পরই আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন, আল্লাহ ভীরু প্রতিটা মানুষের জন্য এতে রয়েছে নিদর্শন ।(ডাইনোসর ইসলাম)
এছাড়া পবিত্র কুরআনে সূরা আল আরাফের ৫৬ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন,وَلَا تُفۡسِدُوۡا فِی الۡاَرۡضِ بَعۡدَ اِصۡلَاحِہَا وَادۡعُوۡہُ خَوۡفًا وَّطَمَعًا ؕ اِنَّ رَحۡمَتَ اللّٰہِ قَرِیۡبٌ مِّنَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ
পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে অনর্থ সৃষ্টি করো না। তাঁকে আহবান কর ভয় ও আশা সহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।
অর্থাৎ পৃথিবী একসময় ছিল কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং তা আমাদের বসবাসের জন্য উপযোগী ছিল না।আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের জন্য পৃথিবীকে ঠিক করে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে তিনি বলেছেন, আমরা যেন অনর্থ সৃষ্টি না করি অর্থাৎ দাঙ্গা-হাঙ্গামা না করি। অর্থাৎ পৃথিবীতে আমাদের পূর্বে যারা ছিলো সেটা হোক জ্বীন জাতি বা আল্লাহর অন্য কোনো সৃষ্টি যাদেরকে আল্লাহ রাজত্ব দিয়েছিলেন তারা পৃথিবীতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করেছিলো ।(dragons in islam)
আর আল্লাহ তা'য়ালা ডায়নোসরদের পৃথিবীতে রাজত্ব দিয়েছিলেন। তারা প্রায় ১৭ কোটি বছর পৃথিবীতে রাজত্ব করেছিলো। এজন্য আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন পৃথিবীকে ঠিক করার পর এতে অনর্থ সৃষ্টি করো না।পৃথিবীতে যদি ডায়নোসর থাকতো তাহলে পৃথিবী কখনো আমাদের বসবাসের উপযোগী হতোনা।তাই সহজেই এটা বোঝা যায়, একসময় আমাদের জন্য পৃথিবী বসবাসের উপযোগী ছিল না আর এটার কারণ অবশ্যই ডায়নোসর হতে পারে।(ডাইনোসরের ইতিহাস)
কারণ জ্বীন জাতি এখনো পৃথিবীতে রয়েছে।যদি এই "ঠিক" দ্বারা জ্বীন জাতিকে উদ্দ্যেশ্য করা হতো তাহলে পৃথিবীতে তারাও থাকতো না।জ্বীন জাতিও পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতো।
এছাড়া সূরা আল বাকারার ৩০ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন,
وَاِذۡ قَالَ رَبُّکَ لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اِنِّیۡ جَاعِلٌ فِی الۡاَرۡضِ خَلِیۡفَۃً ؕ قَالُوۡۤا اَتَجۡعَلُ فِیۡہَا مَنۡ یُّفۡسِدُ فِیۡہَا وَیَسۡفِکُ الدِّمَآءَ ۚ وَنَحۡنُ نُسَبِّحُ بِحَمۡدِکَ وَنُقَدِّسُ لَکَ ؕ قَالَ اِنِّیۡۤ اَعۡلَمُ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ
আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না।
আল্লাহ তা'য়ালা বললেন তিনি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করবেন (এই প্রতিনিধি সৃষ্টির অর্থ হচ্ছে তাকে আল্লাহ তা'য়ালা জান্নাত জাহান্নামের পাশাপাশি পৃথিবীতে রাজত্ব দান করবেন)।আর ফেরেশতারা জানতেন পৃথিবীতে আল্লাহ যাদেরকেই রাজত্ব দান করবেন তারাই অনর্থ সৃষ্টি করবে, রক্তপাত ঘটাবে ।
আল্লাহ তা'য়ালা পৃথিবীতে রাজত্ব দান করেছিলেন জ্বীনদের, তারা পৃথিবীতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা করতো। ১৭ কোটি বছর পৃথিবীতে রাজত্ব স্থাপন করেছিলো ডাইনোসর। এই ডাইনোসররাও নিজেদের মধ্যে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করতো এবং রক্তপাত ঘটাতো। পাশাপাশি তারা অন্যান্য যেসকল প্রাণী রয়েছে তাদেরকে আক্রমণ করতো, খেয়ে ফেলতো। এই ডাইনোসরের আক্রমণ থেকে পৃথিবীর কোন প্রাণীই নিরাপদ ছিল না। কারণ তাদের দেহের যে আকৃতি ছিল তার সাথে পৃথিবীর কোন প্রাণীরই তুলনা ছিল না এবং এখনও নেই।(dinosaur history in islam)
উপরের এই আয়াতটি মূলত নাযিল হয়েছি্লো জ্বীনদের উদ্দেশ্যে।কিন্তু কুরআনে এরকম অনেক আয়াত আছে যেখানে দেখা যায় একটি আয়াত নাযিল হয়েছি্লো অনেকগুলো প্রেক্ষাপট এর উপর ভিত্তি করে। তাই কুরআনের একটি আয়াত শুধুমাত্র একদিকে নিয়ে যাবেন সেটা কিন্তু ঠিক হবে না।
পবিত্র কুরআনে ১০০ এরও বেশি আয়াতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে যেন তারা চিন্তা-ভাবনা করে, শোনে,মনোযোগ দেয়,তুলনা করে বা পরিমাপ করে,ভাবে,বুদ্ধি ও বিবেকের চর্চা করে এবং বিচার-বিবেচনা করে। সর্বোপরি মেধাকে যেন কাজে লাগায়। আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, 'তারা কি কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না, নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ? (সূরা মুহাম্মদ : ২৪)
যেহেতু কুরআন নাযিল হয়েছে ৬০০ সালের পরে থেকে এবং ৬৩২ সালের দিকে এটি পূর্ণতা পায় আর ডাইনোসর শব্দটি এ্সেছে ১৮৩২ সালে তাই পবিত্র কুরআনে ডাইনোসরের নাম কখনই সরাসরি উল্লেখ থাকবেনা এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু ডাইনোসর সম্পর্কে কুরআন থেকে যে কথাগুলো বলা হয়েছে এগুলোর একটাও ফেলে দেয়ার মতো নয়।পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা তার নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করতে বলেছেন আর একটু চিন্তাভাবনা করলে আমরা সহজেই এই ফলাফল পেতে পারি।
উৎসঃ https://youtu.be/RayqCRu7s5M
0 Comments