টাইম ট্রাভেল এবং ইসলাম | Time Travel In Islam

টাইম ট্রাভেল এবং ইসলাম

 টাইম ট্রাভেল | TIME TRAVEL

টাইম ট্রাভেল কথাটি কমবেশি আমরা সবাই শুনেছি কেউ হয়তো মুভি দেখে, আবার কেউ হয়তো গল্পের বই পড়্‌ আবার কেউ হয়তো ইউটিউবে  ভিডিও দেখে।এ টাইম ট্রাভেল আসলে কি আমাদের জীবনে ঘটতে পারে কি না আর ইসলাম এ সম্পর্কে কি বলে তা নিয়েই আজকের আলোচনা।প্রথমেই জেনে নিই  টাইম ট্রাভেল কি?

টাইম ট্রাভেল কি? (What is time travel)

টাইম ট্রাভেল বা সময় ভ্রমণ হচ্ছে সময়ের অক্ষ বরাবর ভ্রমণ। আমরা সবাই তিনটি মাত্রা সম্পর্কে জানি।এর একটি হচ্ছে দৈর্ঘ্য, আরেকটি হচ্ছে প্রস্থ এবং অপর একটি হচ্ছে উচ্চতা। এই তিনটি মাত্রা বরাবর স্থান পরিবর্তন বা ভ্রমণ করা সম্ভব।

তবে ন্যূনতম চতুর্মাত্রিক একটি ধারণা হচ্ছে সময়ের ধারণা। এই চতুর্থ মাত্রা দিয়ে স্থান পরিবর্তন আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। এই সময়ের অক্ষ বরাবর স্থান পরিবর্তনকে  বলা হয় কালমাত্রিক সরণ।

এক সময় থেকে আরেক সময়ে পরিভ্রমণকেও আমরা সময় ভ্রমণ বলে থাকি। এটি হতে পারে অতীতে ভ্রমণ আবার হতে পারে ভবিষ্যতে ভ্রমণ।


টাইম ট্রাভেলের ইতিহাস (The history of time travel)

১৮১৯ সালে ওয়াশিংটন আর্ভিং রচিত বিখ্যাত 'রিপ ভ্যান উইংকেল' বেশ সাড়া ফেলে দেয়। ডাচ বংশোদ্ভূত রিপ একদিন  তার স্ত্রীর ঝগড়া থেকে বাঁচতে নিজের বন্দুক আর  বিশ্বস্ত কুকুর উলফকে নিয়ে পাহাড়ে চলে যান।সেখানে একটি কাঠবিড়ালীর পিছু নিয়ে তিনি পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে থাকেন।হঠাৎ তিনি তার নামে ডাক শুনে দেখেন একজন ডাচ পোশাক পরা একজন ছোট পিপা বহন করে পর্বতের চূড়ার দিকে উঠছে এবং তার সাহায্য চাচ্ছে। তারা একসাথে পিপাগুলো নিয়ে উপরে উঠে এবং আবিষ্কার করে কোথায় থেকে বিকট শব্দ আসে। সে দেখে একজন সুসজ্জিত, নিশ্চুপ ও দাড়িওয়ালা লোক নাইন পিন বাজাচ্ছে। তারা কারা তা জানতে চেয়ে সে পিপা থেকে মদ নিয়ে পান করা শুরু করে এবং শীঘ্রই ঘুমিয়ে পরেন।জাগ্রত হয়ে তিনি দেখেন তার ২০বছর কেটে গেছে।  টাইম ট্রাভেল ধারনা তখন থেকেই আসতে থাকে।


তাছাড়া ১৮৬১ সালে লিখা ফরাসী উদ্ভিদবিদ চালর্স ডিকেন্সের 'A Christmas Carrol' এ সময় ভ্রমণের চমৎকার ধারণা প্রকাশিত হয়।

'নিউ মান্থলি ম্যাগাজিন' এ প্রকাশিত স্বনামধন্য মার্কিন লেখক এডওয়ার্ড হেলের 'হ্যান্ডস অফ' উপন্যাসে টাইম ট্রাভেল এর কথা বলা আছে।

ইসলামে টাইম ট্রাভেল এর প্রমাণ (Time travel in Quran)

আমরা অনেকেই মনে করি ইসলামে টাইম ট্রাভেল নিয়ে কোনো কিছুই উল্লেখ নেই।কিন্তু আমরা যদি আমাদের মহানবী (সাঃ) এর মেরাজ এর ঘটনা এবং ঘুমানো অবস্থায় আমদের রুহ এর অবস্থা সম্পর্কে  ধারনা লাভ করি তাহলে বিষয়টা  পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে যায়।

শবে মেরাজ এর ঘটনা (Miraj and time travel)

আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শবে মেরাজের রাতে সাত আসমান অতিক্রমের ঘটনা কম বেশি আমরা  সবাই জানি। এই রাতে তিনি মহান আল্লাহ তা'য়ালার দর্শন লাভ করেছিলেন।

মহাকাশ সীমাহীন তা আমরা জানি। এই সীমাহীন পথ মহানবী (সাঃ) অতিক্রম করেছেন খুবই অল্প সময়েই।কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব?সবকিছুই লুকিয়ে আছে তার এই অসাধারণ ভাবনাতীত গতির মধ্যেই ।(nabi muhammad time travel)

আমরা জানি, টাইম বা সময় ধীরে না দ্রুত চলে তা নির্ভর করে গতি ও মহাকর্ষ এর উপর। অর্থাৎ, গতি কম হলে টাইম দ্রুত চলে আর গতি দ্রুত হলে টাইম ধীরে চলে।মহানবী (সাঃ) আল্লাহ প্রদত্ত কুদরতের দ্বারা অসাধারণ গতিতে যাওয়ায় টাইম প্রচণ্ড ধীরে চলেছিলো, যার কারণে তার কাছে যেটা মনে হয়েছিলও অনেকদিন সেটা আমাদের কাছে ছিলো এক রাত। অর্থাৎ আমরা যদি  এরকম গতিতে যাই তাহলে আমরাও টাইম ট্রাভেল করতে পারবো।এভাবেই শবে মেরাজের ঘটনা টাইম ট্রাভেলের অভিব্যক্তিকেই প্রকাশ করে।

আমাদের রুহ কতৃক টাইম ট্রাভেল

আমরা যখন ঘুমানো অবস্থায় থাকি তখন আমদের রুহ মহান আল্লাহ তা'য়ালার কাছে চলে যায়।আর এ সময় আমরা অনেকেই বিভিন্ন রকম স্বপ্ন দেখে থাকি।অনেক সময় আমরা স্বপ্নে  অতীতের কোনো কৃত কাজ  বা ভবিষ্যৎ এর কোনো কিছু দেখে থাকি যা কয়েকদিন পর বাস্তবে পরিণত হয়। এসবই মহান আল্লাহ তা'য়ালা প্রদত্ত কুদরতের অংশবিশেষ।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বহু বার ভবিষ্যতের বিভিন্ন ঘটনা দেখে থাকতেন যা তিনি পরে সাহাবীদের কাছে পেশ করতেন।

আমাদের কাছে এসব কিছু অসম্ভব মনে হলেও মহান আল্লাহ তা'য়ালার কাছে তা কিছুই না।পবিত্র কুরআনে সূরা ইয়াসিনের ৮২ নাম্বার আয়াতে বলা আছে,

إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ

অর্থাৎ তিনি (আল্লাহ) যখন কোন কিছু করতে চান , তখন তাকে শুধু বলে দেন ‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়

তাই এরকম স্বপ্ন দেখানো মহান আল্লাহ তা'য়ালার কাছে মোটেই অসম্ভব কিছু নয়।আর এভাবেই তিনি স্বপ্নের মাধ্যমে আমাদের টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে ধারনা দেন। যা প্রমাণ করে যে ইসলামে টাইম ট্রাভেল এর অস্তিত্ব রয়েছে।

এই পৃথিবীতে এমন কিছু নেই যা মহান আল্লাহ তা'য়ালার সৃষ্টি নয়। টাইমও মহান আল্লাহ তা'য়ালার দ্বারাই সৃষ্ট।মহান আল্লাহ তা'য়ালার হুকুমেই এই টাইম ট্রাভেল সম্ভব যা শবে মেরাজের ঘটনা স্পষ্ট প্রমাণ করে।(time travel in bangla)

তাছাড়া প্রিয় নবী মোহাম্মদ (সাঃ) কে মহান আল্লাহ তা'য়ালা স্বয়ং নিজে স্বপ্নযোগে কিয়ামতের আলামত দেখিয়েছেন । তাই আমাদের উচিত আল্লাহ প্রদত্ত যাবতীয় নেয়ামতের শোকরগুজার করা ও তদনুযায়ী আমল করা।


Post a Comment

2 Comments