কুরআনে পিঁপড়ে এবং এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা | Miracle of Ants in Quran

 কুরআনে পিঁপড়ে এবং এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা


পবিত্র কুরআনে সূরা নামল এর ১৮ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন,

 حَتّٰۤی اِذَاۤ اَتَوۡا عَلٰی وَادِ النَّمۡلِ ۙ قَالَتۡ نَمۡلَۃٌ یّٰۤاَیُّہَا النَّمۡلُ ادۡخُلُوۡا مَسٰکِنَکُمۡ ۚ لَا یَحۡطِمَنَّکُمۡ سُلَیۡمٰنُ وَجُنُوۡدُہٗ ۙ وَہُمۡ لَا یَشۡعُرُوۡنَ 

যখন তারা পিপীলিকা অধ্যূষিত উপত্যকায় পৌঁছালো, তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ করো। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে।

আরবি ভাষায় বিবেকসম্পন্ন প্রাণীদের জন্য পুং লিঙ্গ এবং বিবেকবর্জিত ও জড়পদার্থের জন্য স্ত্রী লিঙ্গ ব্যবহার করার নিয়ম থাকলেও মহান আল্লাহ তা'আলা পিঁপড়েদের সংলাপ বর্ণনা করতে গিয়ে পুং লিঙ্গ শব্দ ব্যবহার করেছেন। যা প্রমাণ করে যে,জীবনযাত্রা ও বুদ্ধির দিক থেকে পিঁপড়া এবং মানুষ কাছাকাছি পর্যায়ের প্রাণী।

যেমন-  "قَالَتۡ نَمۡلَۃٌ (কালাত নামলাতু)" মহিলা পিঁপড়াটি  বলল,  "یّٰۤاَیُّہَا النَّمۡلُ (ইয়া আইয়্যুহান নামলু)" হে পিঁপড়ের দল "ادۡخُلُوۡا مَسٰکِنَکُمۡ (উদখুলু মাসাকিনুকুম)" তোমরা তোমাদের গর্তে প্রবেশ কর।মহান আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনের অসংখ্য জায়গায় তাঁর নবীকে সম্বোধন করে "ইয়া আইয়্যুহা" এবং বান্দাকে সম্বোধন করে "উদখুলু" শব্দ ব্যবহার করেছেন। 

সুতরাং আরবি ভাষা রীতি এবং কুরআনের শব্দ বিশ্লেষণ বলছে, মানুষ যেমন বিবেকসম্পন্ন প্রাণী তেমনিভাবে পিঁপড়েরাও বোধসম্পন্ন প্রাণী।

বিজ্ঞান কিছুদিন আগে পর্যন্তও কুরআনের এ গূড় রহস্য স্বীকার করত না। কুরআনের এ আয়াতকে অসাড় প্রমাণ করার জন্য পিঁপড়েদের জীবন নিয়ে একদল চৌকষ বিজ্ঞানী গবেষণা শুরু করেন। গবেষণার এক পর্যায়ে  তারা পিঁপড়ে সম্পর্কে কুরআনের নির্ভুল এবং নিখুঁত তথ্যজ্ঞান দেখে অবাক হয়ে যান।

পতঙ্গ বিজ্ঞানীদের মতে, পিঁপড়াই একমাত্র সামাজিক পতঙ্গ। পিঁপড়েদেরও মানুষের মতো সমাজ, সংসার ও রাষ্ট্রব্যবস্থা আছে। তাদের মধ্যে নিজস্ব বাজার এবং উন্নতমানের যোগাযোগ ব্যবস্থাও রয়েছে। তারা খাদ্য সঞ্চয় করে আবার খাদ্য যদি পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তা শীতের দিন রোদে শুকাতে দেয়।যুদ্ধ-বিগ্রহ তাদের মধ্যেও সংঘটিত হয় এবং  তারা মানুষের মতোই চরম প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে থাকে। পতঙ্গ বিজ্ঞানী ডঃ উইলসন এ তথ্যগুলো ৫০০ প্রজাতির পিঁপড়ের ওপর পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মানুষের মতোই পিঁপড়েরা  তাদের মৃত দেহগুলো কবর দেয়।

সূরা নামল এর ১৮ নং আয়াতের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-

উক্ত আয়াত থেকে পিঁপড়াবিদ্যার চারটি সূত্র পাওয়া যায়। যথাঃ

(১) মানুষের মতোই পিঁপড়েরা কথা বলতে পারে। 

আধুনিক বিজ্ঞানের মতে, পিঁপড়েরা ফেরোমোন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থের প্রতি সংবেদনশীল। তারা একে অপরের সঙ্গে এর মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকে। নিয়ার-ফিল্ড পদ্ধতিতে শব্দ তৈরি করে এক ধরনের পিঁপড়েরা কথা বলে। এভাবে একটি পিঁপড়ে একাধিক পিঁপড়ের সঙ্গে ভাব বিনিময় করে থাকে।যেমনটি আয়াতে বর্ণিত মহিলা পিঁপড়ে অন্যদের সঙ্গে করছে।

(২)পিঁপড়েদের প্রধান হচ্ছে নারী।

পিঁপড়ে সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল-  ঘর সামলায় পুরুষ পিঁপড়েরা, বাইরের কাজ করে নারী পিঁঁপড়ে আর রানী পিঁপড়েগুলো প্রজনন কাজে সময় দেয়। নারী পিঁপড়েরা, রানী পিঁঁপড়ের জন্য খাবার ব্যবস্থা করবে আর পুরুষ পিঁপড়েরা সেই খাবার এবং রানীকে পাহারা দেবে।

পতঙ্গবিদদের ভাষায়, পুরুষ পিঁপড়েরা হল সৈনিক আর নারী পিঁপড়েরা হল শ্রমিক। বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী, নারী পিঁপড়েরা খাদ্য সংগ্রহ অথবা বাইরের কোনো কাজে যখন ব্যস্ত ছিল ঠিক তখনই হযরত সুলাইমান (আ) এর আগমন ঘটে। ফলস্বরূপ, তাদের রানী তাদেরকে নিজেদের গৃহে প্রবেশ করার নির্দেশ দিলেন।নির্দেশের ধরণ থেকে বোঝা যায়, নির্দেশদানকারিনী রানী পিঁপড়েই ছিল। তবে, এটা অন্য মহিলা পিঁপড়েও হতে পারে। 

(৩) মানুষকে পিঁপড়েরা চিনতে পারে।

মানুষের শরীর থেকেও পিঁপড়েদের মতো ফেরোমোন  পদার্থ নিঃসরণ হয়।যার ফলে নারী  পিঁপড়েটি সুলাইমান (আ) এর ফেরোমোন সিগনেচারের মাধ্যমেই তাঁকে চিনতে পেরেছিল। কুকুরও ঠিক একই কারণে প্রত্যেকটি মানুষকে আলাদাভাবে চিনতে পারে।

(৪) পিঁপড়েরা আগাম বিপদ সংকেত বুঝতে পারে।

পতঙ্গ বিজ্ঞানী উলরিশ বলেন, আগাম বিপদ সংকেত বুঝতে পেরে পিঁপড়েরা নিজেদের রক্ষার সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। তবে উলরিশের দাবি, শুধু লাল রঙের বিশেষ শ্রেণীর নারী পিঁপড়েরাই এমন করতে পারে। আমরা আয়াতে দেখেছি,  হাজার হাজার পিঁপড়ে থেকে সুলাইমান (আ) এর আগমন এবং বিপদ সংকেত বুঝতে পেরেছিল শুধু একটি নারী পিঁপড়ে। 

আজকের মুসলমানরা বিজ্ঞানময় কুরআন পড়া ও বোঝায় যেমন পিছিয়ে রয়েছে,তেমনি বিজ্ঞান-গবেষণা-আবিষ্কারেও পিছিয়ে রয়েছে। অথচ আধুনিক পৃথিবী গড়ে উঠতে পারে এ দুটির সমন্বয়ে।

Post a Comment

0 Comments