
রমজান মাস মুসলমানদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস।এই মাস রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস। এই পবিত্র মাসের অন্যতম দান হলো ইফতার। রাসূল (সা) বলেন, কেউ যদি রমজান মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করায় তাহলে ঐ ইফতার করানোটা তার গুনাহ মাফের ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে এবং সে ব্যক্তি একটি রোজার সওয়াব পাবে। অথচ রোজা পালনকারীর নেকী তাতে মোটেই কমানো হবে না।
আমাদের সিলেট জেলায় একটি রেওয়াজ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে সেটি হচ্ছে বিয়ের পর রমজান মাসে বাবার বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়িতে ইফতার সামগ্রী পাঠানো। এই রেওয়াজ এখন প্রায় নিয়মেই পরিণত হয়েছে । যদি কোনো মেয়ের বাবার বাড়ি থেকে ইফতার সামগ্রী না আসে তাহলে শ্বশুর বাড়িতে নানা কথা শুনতে হয় ওই মেয়েকে। আবার প্রেরিত ইফতারসামগ্রী মনমতো না হলেও কটুকথা শুনতে হয় মেয়েকে।তাছাড়া এই ইফতার শুধু মেয়ের বাড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বন্ধু-বান্ধব আর আত্মীয় স্বজনকেও দাওয়াত দেয়া হয় ইফতার করার জন্য।
সিলেটে এই ইফতার পাঠানো নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগিতা চলে। কার শ্বশুরবাড়ি থেকে কত বেশি ইফতার সামগ্রী এলো, কে তার শ্বশুরবাড়ির ইফতার কতবেশি মানুষকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ালো- এসব নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা।
যার শ্বশুরবাড়ি থেকে যত বেশি ইফতার আসে তার ততো বেশি সুনাম। তেমনি যে মেয়ের বাবার ইফতার সামগ্রী দেয়ার সক্ষমতা কম, তিনি যদি ইফতার দিয়ে খুশি করতে না পারেন তাহলে অনেক ক্ষেত্রে সেজন্য কথা শুনতে হয় মেয়েকে।
মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে অনেকেই সুদে টাকা নেন,কেউ আবার গরু বিক্রি করেন,কেউবা নিজের চিকিৎসার টাকা দিয়ে ইফতার সামগ্রী কিনে মেয়ের বাড়িতে পাঠান।
চিন্তা করে দেখুন এই মানুষগুলো কতটা নির্লজ্জ,বেহায়া আর ছোট মনের। এরা শুধু ভিক্ষুক না পাশাপাশি এরা জালিমও।
এই যে রহমতের মাসে এরা মানুষের উপর এতো জুলুম করছে মহান আল্লাহ তা'য়ালা কি এইসব সহ্য করবেন?এই জালিমরা কি তাঁর হাত থেকে বেঁচে যাবে?
পবিত্র কুরআন ও হাদিসে জুলুমকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে এবং তার সাথে জুলুমের নিন্দাও করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে সূরা কাহাফের ২৯ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
আমি জালিমদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি অগ্নি, যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখবে, তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর মতো পানীয়, যা তাদের মুখমণ্ডল বিদগ্ধ করবে, এটি কত নিকৃষ্ট পানীয়, জাহান্নাম কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয়।
তাছাড়া সূরা মুমিনের ১৮ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
তাদের সতর্ক করে দাও আসন্ন দিন (কেয়ামত) সম্পর্কে এবং দুঃখকষ্টে তাদের প্রাণ কণ্ঠাগত হবে। জালিমদের জন্য কোনো অন্তরঙ্গ বন্ধু নেই এবং যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে এমন কোনো সুপারিশকারীও নেই।
এভাবে কুরআনুল কারিমের অনেক আয়াত রয়েছে,যেখানে জালিমের কঠিন শাস্তির কথা আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ জালিমকে সুযোগ দেন কিন্তু ছাড় দেন না। জালিমকে তার জুলুমের শাস্তি অবশ্যই ভোগ করতে হবে।রাসুল (সা.) হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর কথা বর্ণনা করে বলেন,
يا عبادي إني حرمت الظلم على نفسي وجعلته بينكم محرماً، فلا تظالموا
হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম করো না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৩৭)
রাসূল (সাঃ) আরও বলেনঃ
أتقوا الظلم فإن الظلم ظلمات يوم القيامة
তোমরা জুলুম থেকে বিরত থাকো। কেননা কিয়ামতের দিন জুলুমের পরিণাম হবে খুবই অন্ধকার। (মুসলিম)
দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তা'আলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।(তিরমিজি, হাদিস : ২৫১১)
এইসব ইফতার সামগ্রী দিতে যেরকম মোটা অংকের টাকা খরচ হয় পাশাপাশি অনেক খাবারেরও অপচয় হয়।আর অপচয় সুন্নাত পরিপন্থী কাজ।তা ইফতার হোক কিংবা অন্য খাবার। আর সংযমের মাসে ইফতারে বাড়াবাড়ি ও জৌলুস করাও উচিত নয়। কেননা সূরা আরাফের ৩১ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,
তোমরা খাও ও পান করো। অপচয় করো না।
যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে। ওই রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে, তবে ওই রোজাদারের সওয়াবে কোনো কম করা হবে না।
পানি মিশ্রিত এক চুমুক দুধ বা একটি শুকনো খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দ্বারাও যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে আল্লাহ তাকে এ পরিমাণ সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পরিতৃপ্তভাবে খানা খাওয়াবে আল্লাহ তায়ালা তাকে আমার হাউজ (হাউজে কাওসার) হতে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্বে তৃষ্ণার্ত হবে না।(বায়হাকী ওয়াবুল ঈমান, মেশকাত)।
0 Comments