মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ও আল কুরআন || The Qur'an and gravitational force

মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ও আল কুরআন || The Qur'an and gravitational force

কুরআনে মহাকর্ষ বলের ধারনা

মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কথা শুনলেই প্রথমে যে ব্যক্তির নাম আমাদের মাথায় আসে তিনি হলেন বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন। তার মাথায় আপেল পড়ার ঘটনাটি মোটামোটি আমরা সবাই জানি। বিজ্ঞানী নিউটন একদিন আপেল গাছের নিচে বসে ছিলেন। তখন আচমকা তার মাথায় একটি আপেল এসে পড়ল এবং তিনি চিন্তা করতে লাগলেন এই আপেলটি উপরের দিকে না গিয়ে কেন নিচে নেমে আসলো। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই তিনি আবিষ্কার করে ফেললেন মধ্যাকর্ষণ শক্তি।

নিউটনের তত্ত্ব অনুযায়ী, কোন কিছু উপরে না গিয়ে নিচে পড়ে এর কারনই হচ্ছে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি।পৃথিবীর এক অদৃশ্য আকর্ষণ শক্তি রয়েছে যার জন্য পৃথিবী  সবকিছুকে নিজের দিকে টানে। পৃথিবী সবকিছুকে নিজের দিকে টানে বলেই কোন জিনিস উপরে না গিয়ে নিচে  পড়ে। আর এজন্যই আমরা মাটিতে চলাচল করতে পারি, শূন্যে ভেসে থাকি না।

পৃথিবী হচ্ছে ধারণকারী, যা আমাদেরকে তার দিকে ধরে রেখেছে।পৃথিবীর যদি এই আকর্ষণ শক্তি না থাকতো তাহলে আমরা মাটিতে হাঁটতে পারতাম না, ভেসে ভেসে উপরের দিকে উঠে যেতাম।আর এই কথাটি স্বাভাবিক ভাবেই চৌদ্দশ পঞ্চাশ বছর পূর্বের মানুষের পক্ষে জানা  সম্ভব ছিলো না।কিন্তু পবিত্র কুরআনের সূরা আল মুরসালাত এর ২৫ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,  

 اَلَمۡ نَجۡعَلِ الۡاَرۡضَ کِفَاتًا ۙ (আমি কি পৃথিবীকে সৃষ্টি করিনি ধারণকারিণীরূপে,)

আলোচ্য আয়াতে পৃথিবিকে আকর্ষণকারী বা ধারণকারী বলা হয়েছে। চৌদ্দশ পঞ্চাশ বছর পূর্বে মানুষ বুঝতে পারেনি যে, এই আয়াত দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে। কিন্তু যখন আইজ্যাক নিউটন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আবিষ্কার করলেন তখন মানুষ বুঝতে পারল, এই আয়াত দ্বারা আসলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কথা বুঝানো হয়েছে।

পৃথিবীর মধ্যে এমন কি আছে যার জন্য এই আকর্ষণ হচ্ছে?

Geologist- গণ গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন যে পৃথিবীর অভ্যন্তর অত্যধিক ভারী বস্তুতে পরিপূর্ণ। যেমনঃ লোহা, নিকেল, হীরা আর অনেক প্রকারের যৌগিক ওজনদার বস্তু। গবেষকরা  মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন যে, এই আকর্ষণ বল এতো শক্তিশালী হওয়ার অন্যতম কারণ হলো পৃথিবীর আভ্যন্তরীক বস্তুগুলোর ওজন। ওজন যত বেশি ভারী হবে আকর্ষণ ক্ষমতা ততো বেশি শক্তিশালী ও প্রবলতর হবে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীগণ পৃথিবীর গভীরে এক ধরনের ভারী তরল পদার্থ পেয়েছেন যা অবিরত সেখানে পাক খেয়ে স্থান পরিবর্তন করে চলেছে। অভ্যন্তরে তার এই চলাচল একটি পথে পরিণত হয়েছে-  বৈজ্ঞানিক ভাষায় যাকে ম্যাগনেটিক রানিং রুট (Magnetic Running Root) অথবা চুম্বকপথ বলা হয়।

 এ Magnetic- কে আল্লাহ তা'য়ালা এমন পর্যায়ে ক্ষমতা দিয়েছেন যে, বায়ুমণ্ডলের উপরে Van Aleen Belt কে কয়েক হাজার মাইল দূর থেকে কন্ট্রোল করে থাকে।পবিত্র কুরআনের সূরা আল যিল্‌যাল এর (১-৩) নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,  

اِذَا زُلۡزِلَتِ الۡاَرۡضُ زِلۡزَالَہَا ۙ(যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে,)

وَاَخۡرَجَتِ الۡاَرۡضُ اَثۡقَالَہَا ۙ (যখন সে তার বোঝা বের করে দেবে।)

وَقَالَ الۡاِنۡسَانُ مَا لَہَا ۚ (এবং মানুষ বলবে, এর কি হল ?)

উপরোক্ত আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে, পৃথিবীর অভ্যন্তরে ভারী বোঝা রয়েছে। এই আয়াতসমূহের ব্যাখ্যায় একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছিল যেখানে মুসলিমদের সাথে উপস্থিত ছিলেন আমেরিকার অধিবাসী  John Satiklaz। তিনি বলেন, পৃথিবীর অভ্যন্তরে রয়েছে ভারী বোঝা। আর এই বোঝাগুলো অনতিবিলম্বে বেরিয়ে আসবে এবং মধ্যাকর্ষণ শক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। যখন সেগুলো বেরিয়ে আসবে তখন কি অবস্থা হবে?আল্লাহ তা'য়ালা অন্য আয়াতে তা সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। 

পবিত্র কুরআনের সূরা আল ইন্‌শিকাক এর (৩-৪) নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,  

وَاِذَا الۡاَرۡضُ مُدَّتۡ ۙ (এবং যখন পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে।)

وَاَلۡقَتۡ مَا فِیۡہَا وَتَخَلَّتۡ ۙ (এবং পৃথিবী তার গর্ভস্থিত সবকিছু বাইরে নিক্ষেপ করবে ও শুন্যগর্ভ হয়ে যাবে।)

এটা হচ্ছে মাটির নিচের সেই বস্তু যার কথা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। যখন পৃথিবী তার গর্ভস্থিত সবকিছু বাইরে নিক্ষেপ করে দিবে এবং শূন্যগর্ভ হয়ে যাবে তখন আর মধ্যাকর্ষণ শক্তি থাকবে না মহাবিশ্বের এই সুন্দর নিয়ম নীতি, আইন-শৃঙ্খলা আর থাকবে না। আর এসবকিছুই হবে কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে। 

তাহলে এই আয়াত দ্বারা এটা স্পষ্ট যে পবিত্র কুরআন চৌদ্দশ পঞ্চাশ বছর পূর্বেই আমাদেরকে  মধ্যাকর্ষণ বল  সম্পর্কে বলে দিয়েছে। আর পৃথিবীর অভ্যন্তরে যে ভারি বস্তুগুলো রয়েছে সেগুলো যে মধ্যাকর্ষণ শক্তির জন্য দায়ী তাও পবিত্র কুরআন আমাদের স্পষ্টভাবে বলে দেয়।

Post a Comment

0 Comments