রমজান মাসে কুরআন খতম করছেন কিন্তু খতম কি হচ্ছে?


রমজান মাসে কুরআন খতম করছেন কিন্তু খতম কি হচ্ছে?


 

সূরা আল বাকারার ১৮৫ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-


 شَہۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡہِ الۡقُرۡاٰنُ ہُدًی لِّلنَّاسِ وَبَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡہُدٰی وَالۡفُرۡقَانِ ۚ فَمَنۡ شَہِدَ مِنۡکُمُ الشَّہۡرَ فَلۡیَصُمۡہُ ؕ وَمَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰہُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَلَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَلِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَلِتُکَبِّرُوا اللّٰہَ عَلٰی مَا ہَدٰىکُمۡ وَلَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ 

রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন , যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।


উক্ত আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি রমজান মাসেই পবিত্র  কুরআন নাযিল করা হয়েছে। আমরা যদি একটু খেয়াল করি তাহলে দেখতে পাবো যে ফেরেশতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ফেরেশতা হচ্ছেন  হযরত জিব্রাইল (আঃ)।  তিনি  কুরআন নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন।জিব্রাইল (আঃ)  কুরআন নিয়ে পৃথিবীতে নাযিল হওয়ার কারণে  তিনি হয়েছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফেরেশতা।

আবার রমজান মাসে কুরআন নাযিল হওয়ার কারণে এই মাসটি হয়েছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মাস। আর কদরের  রাতে কুরআন নাযিল হওয়ার কারণে এই রাত হয়েছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রাত। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ওপর কুরআন নাযিল হওয়ার কারণে তিনি হয়েছেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নবী।আবার হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মাহ  অর্থাৎ আমাদের  উপর কুরআন নাযিল হওয়ার কারণে  আমরা হয়েছি পৃথিবীর  শ্রেষ্ঠ উম্মাহ। 

খেয়াল করে দেখেছেন বিষয়টা! জিব্রাইল (আঃ) কুরআন নিয়ে এসে  হয়েছেন শ্রেষ্ঠ ফেরেশতা। রমজান মাস কুরআনকে পেয়ে  হয়েছে শ্রেষ্ঠ মাস। লাইলাতুল কদর কুরআনকে পেয়ে হয়েছে শ্রেষ্ঠ রাত। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কুরআন ধারণ করে হয়েছেন  শ্রেষ্ঠ রাসুল। আমাদেরকে কুরআন দিয়ে আমাদের বানানো হয়েছে শ্রেষ্ঠ উম্মাহ ।

তেমনি  আমাদের মধ্য থেকে যারা কুরআনের সাথে সবসময় সম্পৃক্ত  থাকবে, কুরআনের সাথে সম্পর্ক জুড়ে দিবে তারা হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ । তাই আসুন রমজান মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করে কুরআনের সাথে সম্পর্কটাকে আরো জোরদার করে নেই ।

আমাদের দেশে দেখা যায় কিছু মানুষ রমযান মাসে কুরআন কিভাবে বেশি করে খতম করবে সেটাকে বেশি গুরুত্ব দেয়।কুরআন তাড়াতাড়ি খতম দেয়ার জন্য তারা অত্যন্ত দ্রুততার সাথে কুরআন তেলাওয়াত করে।আবার কেউ কেউ দেখা যায় একসাথে ৫/৬ বার কুরআন খতম দিয়ে অন্যজনকে গর্ব করে বলবে, "আমিতো ৫ খতম দিছি তুমি কতো খতম দিছো?" যেটা মূলত লোক দেখানো কাজের মধ্যে পড়ে যায়।যার জন্য নেকির পরিবর্তে গুনাহ হতে পারে।

আমাদের বুঝতে হবে কুরআন শুধু হাতে গুণে গুণে খতম করার জন্য  নাযিল করা হয়নি।তাই কুরআন খতমের জন্য উঠেপড়ে না লেগে আমাদের উচিত কুরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত নিশ্চিত করা। আমরা রমজানে প্রতিদিন যতটুকু কুরআন তেলাওয়াত করবো তা যেন বিশুদ্ধভাবে ও তাজবিদ সহকারে  করতে পারি এবং তেলাওয়াতের গুনগত মান নিশ্চিত করে আমরা যেন তেলাওয়াত করি।

কুরআনের কিছু তেলাওয়াতকারি আছেন যাদেরকে কুরআন রহমতের পরিবর্তে লানত দেয়।আমরা যেনো এই রহমতের মাসে লানত না কুড়াই।আমরা যেনো বেশি বেশি করে রহমত কুড়াতে পারি। তাই আমাদেরকে তাজবিদ মেনে,তারতীলের সাথে ও কুরআনের গুনগত মান নিশ্চিত করে কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে।

সূরা আল মুয্‌যাম্মিল এর ৪ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন-

 اَوۡ زِدۡ عَلَیۡہِ وَرَتِّلِ الۡقُرۡاٰنَ تَرۡتِیۡلًا ؕ

অথবা তদপেক্ষা বেশী এবং কোরআন আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্ত ভাবে ও স্পষ্টভাবে।

অর্থাৎ আমাদের তারতীলের সাথে কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে তথা ধীরস্থিরভাবে,থেমে থেমে , তাজবিদ সহকারে,তেলাওয়াতের গুণগত মান নিশ্চিত করে।হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কুরআন তেলাওয়াত করতেন তারতীলের সাথে।

কুরআন পাঠের পদ্ধতি

হযরত আনাস (রাঃ) কে রাসুল (সাঃ) এর কুরআন পঠনের পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হলে তিনে বলেন, 

‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআন পড়তেন টেনে টেনে ।তিনি ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ পাঠ করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’টেনে পড়তেন; ‘আর রহমান’ টেনে পড়তেন; ‘আর রহিম’ টেনে পড়তেন।’ (বুখারি)

কুরআন তিলাওয়াতের পরিমাণ

সাহাবায়ে কেরাম আজমাঈন নির্দিষ্ট পরিমাণে দিনে এবং রাতে  কুরআন তিলাওয়াত করতেন।তারা কেউ সাত দিনের কম সময়ে  কুরআন খতম করতেন না। পাশাপাশি তিন দিনের কম সময়ে কুরআনের তিলাওয়াত খতমের ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।  তাই কুরআনের তিলাওয়াত হতে হবে সুন্দরভাবে, সহিহ শুদ্ধভাবে; যে ভাবে তিলাওয়াত করলে কুরআনের হক আদায় হয়।

তাছাড়া কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে সুরসহকারে এবং মনের মাধুরী মিশিয়ে।বারা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 

‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এশার নামাজে সুরা ত্বিন পড়তে শুনেছি। আমি তাঁর চেয়ে সুন্দর কণ্ঠে আর কাউকে তিলাওয়াত করতে শুনিনি।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৫৪৬; মুসলিম, হাদিস : ১০৬৭)

আমাদের রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন,

 ‘সে আমার উম্মত নয়, যে সুরসহযোগে কুরআন পড়ে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৫২৭; আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৭১)

তাই আমাদের যার গলায় যতটুকু সুর আছে সেই সুর দিয়ে টেনে টেনে ও প্রতি আয়াতে থেমে থেমে কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে। 

কেউ যদি এই সব নিয়ম মেনে রমজান মাসে কুরআন খতম করতে পারে তাহলে সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়।তাই সবসময় খেয়াল রাখতে হবে তেলাওয়াত যেনো সহিহ শুদ্ধভাবে হয় আর সেটা যেনো লোক দেখানো না হয়।

উৎস: https://www.youtube.com/watch?v=HpCKkHBgUQc

Post a Comment

4 Comments