বিচার দিবসে আমাদের রাসূল (স) [শেষ পর্ব]

 

বিচার দিবস || The Day of Judgement

রাসূলুল্লাহ (স) এর ইন্তেকালের পরে কিছু মানুষ বিখ্যাত সাহাবি আনাস ইবনে মালিক (রা) এর কাছে গেলে তিনি বলেন, فَقَالَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ صلى الله عليه রাসূলুল্লাহ (স) আমাদের বলেছেনঃ إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ مَاجَ النَّاسُ بَعْضُهُمْ فِي بَعْضٍ  বিচার দিবস যখন শুরু হবে, মানুষ  একে অপরের উপর  ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়বে। সবাই একে অন্যের দিকে ছুটতে থাকবে,সর্বত্র বিশৃঙ্খলা বিরাজ করবে। কোন একভাবে তারা হযরত আদম (আ) এর দেখা পাবে। সমগ্র মানব জাতি তখন আদম (আ) এর কাছে ছুটে যাবে। তারা বলবে, আপনি কি দয়া করে আমাদের পক্ষ থেকে আল্লাহর সাথে কথা বলতে পারবেন?  আমরা সবাই তো আপনার সন্তান।     

তিনি তখন বলবেন,আমি এর যোগ্য নই । তোমরা ইব্রাহিমের সাথে কেন কথা বলছো না? তিনি বলবেন, তাঁর কাছে যাও। কারণ, তিনি আর রাহমানের খুবই কাছের বন্ধু। পবিত্র কুরআনে এসেছে , ۗ وَاتَّخَذَ اللَّهُ إِبْرَاهِيمَ خَلِيلًا  – আল্লাহ ইব্রাহিমকে তাঁর বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।(৪:১২৫) (hadith on the day of judgement)

তারা তখন ইব্রাহিম (আ) এর কাছে যাবে। ইব্রাহিম (আ) এর কাছে গেলে তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই। তোমরা কেন মুসা (আ) এর কাছে যাচ্ছ না?  তিনি হলেন কালিমুল্লাহ,আল্লাহর সাথে তিনি অনেক কথা বলতেন। । কুরআনে এসেছে – وَكَلَّمَ اللَّهُ مُوسَىٰ تَكْلِيمًا – “আর আল্লাহ মূসার সাথে কথা বলেছেন সরাসরি।” (৪:১৬৪)

মানব জাতি তখন দৌড়ে মুসা (আ) এর কাছে যাবে। তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই। তোমরা ঈসা (আ) এর কাছে যাও।তিনি হলেন আল্লাহর দেওয়া রুহ এবং আল্লাহর কালিমা। “কুন ফায়াকুন”, আল্লাহর হুকুমে তিনি অলৌকিকভাবে জন্ম গ্রহণ করেন। অতএব, যেহেতু তিনি সকল রাসূলদের মধ্যে বিশেষ মর্যাদার তাই তাঁর কাছে যাও। তারা সবাই ঈসা (আ) এর কাছে যাবে। তিনি বলবেন, আমি পারব না। এই কাজের জন্য আমাকে তৈরি করা হয়নি।

তারপর তিনি বলবেন, মানবজাতি, তোমরা মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে যাও।অতঃপর মানুষ  রাসূলুল্লাহ (স) এর কাছে যাবে।তিনি বলবেন “আনা লাহা” আমার জন্যই এই কাজ,আমিই এর যোগ্য।

বিচার দিবসে এমন এক ধরনের নীরবতা বিরাজ করবে যার কথা মানবজাতি কোনদিন শুনেনি। সেই রকম পিন পতন নীরবতায় আল্লাহ বলেন, لَّا يَتَكَلَّمُونَ  কেউ কথা বলতে পারবে না। إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَٰنُ  দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন সে ব্যতিত। আর তিনি হলেন হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (স)।(what will happen on the day of judgement)

রাসূলুল্লাহ (স) বলেন,আমি আল্লাহর সামনে এসে আল্লাহর কাছে কথা বলার অনুমতি চাইবো। (فَيُؤْذَنُ لِي ) আমাকে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হবে। তিনি বলেন, (وَيُلْهِمُنِي مَحَامِدَ أَحْمَدُهُ بِهَا لاَ تَحْضُرُنِي الْآنَ ) সেই দিন আল্লাহ আমাকে বিশেষ একটি দোয়ার মাধ্যমে তাঁর প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা করা শিখাবেন,  যা তিনি এখনো আমাকে দেননি। (فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ )তারপর, আমি আল্লাহর দেওয়া সেই বিশেষ বাক্যগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা করব।( وَأَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا ) সেই বাক্যগুলো উচ্চারণ করার পর আমি আল্লাহর সমীপে সেজদায় অবনত হব।(day of judgement in quran)

আল্লাহ বলবেন “ইয়া মুহাম্মাদ! ইরফা’ রা’সাক” “মুহাম্মাদ! তোমার মাথা উত্তোলন কর। وَقُلْ বল, يُسْمَعْ لَكَ তোমার কথা শোনা হবে , -وَسَلْ تُعْطَ ” চাও, তোমাকে দেওয়া হবে।”

 (فَأَقُولُ يَا رَبِّ) তখন আমি বলবো, ইয়া রব! হে আমার প্রতিপালক!أُمَّتِي أُمَّتِي উম্মাতি, উম্মাতি। তিনি সর্বসাকুল্যে এই কথা বলবেন। এটাই তাঁর সম্পূর্ণ বাক্য। “আমার উম্মাহ, আমার উম্মাহ। আমার মানুষ! আমার মানুষ!” 

কিয়ামতের দিন সবাই বলবে, নাফসি নাফসি। “আমি নিজে, আমি নিজে।”  আর আমাদের রাসূল (স) বলবেন, উম্মাতি উম্মাতি।কুরআনে কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে এইভাবে-

(يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ) প্রত্যেক মা যে তার বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছে, সে তার বাচ্চাকে ফেলে দিবে যেন সে কিছুই না। (২২:২)

(يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ أَخِيهِ – وَأُمِّهِ وَأَبِيهِ)  সেদিন মানুষ ভাইয়ের কাছ থেকে পালাবে, মায়ের কাছ থেকে পালাবে, বাবার কাছ থেকে পালাবে। (وَصَاحِبَتِهِ وَبَنِيهِ)  তার স্ত্রীর কাছ থেকে, তার ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে। (৮০ঃ৩৪-৩৬)  

সেই দিন সবাই  নিজেকে নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকবে। কুরআনে এসেছে, এক ব্যক্তি বলবে (وَمَن فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ يُنجِيهِ)  ইয়া আল্লাহ! দুনিয়ার সবাইকে জাহান্নামে নিয়ে যান এবং বিনিময়ে আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করতে দিন। (৭০:১৪) 

সেদিন মানুষ এমন মরিয়া হয়ে উঠবে।একজন মানুষ সেইদিন মহান আল্লাহর সাথে কথা বলবেন, আর তাঁর মুখ থেকে প্রথম যে শব্দগুলো  উচ্চারিত হবে তা হলো , উম্মাতি উম্মাতি। 

আল্লাহ তা'য়ালা জবাবে বলবেন, (فَيَقُولُ انْطَلِقْ) এগিয়ে যাও। فَأَخْرِجْ مِنْهَا مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ شَعِيرَةٍ مِنْ إِيمَانٍ – “যাও, এখান থেকে বের করে নাও যাদের আছে এমনকি এক — এখানে ‘শায়ীরা’ মানে বার্লির দানা যা সামান্য একটু লম্বা হয়, যাদের অন্তরে এতোটুকু পরিমাণ ঈমান আছে, যেকোনো ঈমান, যদি তাদের অন্তরে থেকে থাকে তাহলে তাদের বের করে নাও। আপনি এগিয়ে যান এবং বের করে নিন।”


কল্পনা করুনতো দৃশ্যপটটি । আমাদের রাসূলুল্লাহ (স) মানুষকে ডাকছেন যাও, যাও, যাও এবং তিনি তাদেরকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিছু মানুষকে নিয়ে যাওয়ার পর ফেরেশতারা মানুষদের থামিয়ে দিবেন। কারণ, কারো কারো ঈমান এর চেয়েও ছোট।

(فَأَنْطَلِقُ فَأَفْعَلُ)  “আমি গিয়ে এমনই করব।” (ثُمَّ أَعُودُ) “তারপর আমি ফিরে আসব।” অর্থাৎ, ফেরেশতারা তাঁকে থামিয়ে দিবেন। আর অন্য মানুষেরা তখন সেখানে কাঁদতে থাকবে।তারা বলবে, আমাদের কী হবে? আমাদের কী হবে? 

রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, ( فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ ) অতঃপর আমি পুনরায় সেসব প্রশংসা বাক্য দ্বারা আল্লাহর প্রশংসা করবো।( ثُمَّ أَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا ) “আর সিজদা্য় পড়ে যাবো।”  “আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! তোমার মাথা উঠাও।”( وَقُلْ يُسْمَعْ لَكَ )“বল, তোমার কথা শোনা হবে।” وَسَلْ تُعْطَ – “চাও, তোমাকে আবারো দেয়া হবে।” وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ – “সুপারিশ কর, গ্রহণ করা হবে।” ( فَأَقُولُ يَا رَبِّ أُمَّتِي أُمَّتِي ) “আমি তখন বলবো, হে আমার রব, আমার উম্মাত! আমার উম্মাত! ”

এরপর আল্লাহ্ বলবেন, এগিয়ে যাও, فَأَخْرِجْ مِنْهَا مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ أَوْ خَرْدَلَةٍ مِنْ إِيمَانٍ – যাদের অন্তরে এক বিন্দু পরিমাণও ঈমান আছে  (বার্লির দানা নয়, বার্লির দানা তো এতোটুকু লম্বা, বরং বিন্দু পরিমাণ, ‘খারদালা মানে সরিষার দানা) অতি ক্ষুদ্র বিন্দুর মত তাদেরকেও সেখান থেকে বের করে আনো।রাসূলুল্লাহ (স) বলেন,“আমি যাবো এবং তাই করবো।”


এটা বিশাল এক জনগোষ্ঠী যারা মহান আল্লাহ তা'য়ালার কাছ থেকে দূরে সরে ছিলো। তাদের ভেতরে ছিলো একেবারে ক্ষুদ্র কিছু ঈমান । এরপর তো আর কিছুই নেই মনে হচ্ছে, ঘটনা শেষ। কিন্তু নাহ্‌ রাসূলুল্লাহ (স),আবারো ফিরে যাবেন এবং فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ ثُمَّ أَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا – “আমি সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করবো এবং আবারো সিজদা্য় পড়ে যাবো।” فَيُقَالُ يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ – “আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও।” وَقُلْ يُسْمَعْ لَكَ – “বল, তোমার কথা শোনা হবে।” وَسَلْ تُعْطَ – “চাও, দেওয়া হবে।”

فَأَقُولُ يَا رَبِّ أُمَّتِي أُمَّتِي – “আমি তখন বলবো, হে আমার রব, আমার উম্মাত! আমার উম্মাত!”

আল্লাহ বলবেন ( فَيَقُولُ انْطَلِقْ ) সামনে এগিয়ে যাও। فَأَخْرِجْ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ أَدْنَى أَدْنَى أَدْنَى مِثْقَالِ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ – যাও, সামনে এগিয়ে যাও এবং এমন প্রত্যক ব্যক্তিকে বের করে আনো যার একটি সরিষার অতি ক্ষুদ্র, অতি ক্ষুদ্র, অতি ক্ষুদ্র অংশ পরিমাণ ঈমান আছে। এতো ক্ষুদ্র বিন্দু আপনারা যাকে হয়তো মাইক্রোস্কপিক বলবেন।


তো, মহান আল্লাহ রাসূল (স) কে বলেন ( فَأَخْرِجْهُ مِنْ النَّارِ )“তাদেরকে আগুন থেকে বের করে আনো ।” অর্থাৎ, ইতোমধ্যে কিছু মানুষ জাহান্নামে পতিত হয়ে গেছে। অনেকেই এই হাদিসটি পড়ে মনে করেন, আমরা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে যাবো, আগুন আমাদের স্পর্শ করবে না। কিন্তু, হাদিস এই কথা বলছে না। রাসূ্ল (স) আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি করছেন। বিচার দিবস হবে পঞ্চাশ হাজার বছর লম্বা।দেখা যাচ্ছে যে, অনেকের বিচার ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। তারা ইতোমধ্যে জাহান্নামে পতিত হয়েছে। 

আর আমি শুরুতেই  সেই আগুন সম্পর্কে বলেছিলাম যে,আপনি যদি এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের জন্য এর বাতাসের স্পর্শ পান তাহলে আপনার কাছে মনে হবে এর চেয়ে ভয়ংকর কোন শাস্তি হতে পারে না। আর ইতোমধ্যে কিছু মানুষ সেই আগুনে পড়ে গেছে।তারা কিন্তু মুসলিম। কারণ, রাসূল (স) এর মুখ থেকে উচ্চারিত কথাগুলো হচ্ছে  উম্মাতি উম্মাতি। আগুনের মানুষগুলো  অমুসলিম নয়, মুসলিম। আর তাদের মুক্তির জন্যেও তিনি আল্লাহর কাছে ভিক্ষা চাচ্ছেন।রাসূলুল্লাহ (স) বলেন ( فَأَنْطَلِقُ فَأَفْعَلُ ) "আমি যাবো এবং তাই করবো।"


রাসূল (স) এর এই কথার সাথে হাদিসের সমাপ্তি হলো। আনাস ইবনে মালিক (রা) তাঁর কাছে আসা লোকদের কাছে এতোটুকু বর্ণনা করলেন।قُلْتُ لِبَعْضِ أَصْحَابِنَا হযরত আনাসের কাছে হাদিস শিখতে আসা একজন লোক বললেন, “আমি আমার কিছু সঙ্গীকে বললাম” لَوْ مَرَرْنَا بِالْحَسَنِ وَهُوَ مُتَوَارٍ فِي مَنْزِلِ أَبِي خَلِيفَةَ – চলো, হাসান বস্রীর কাছে যাই। আমরা আনাস (রা) এর কাছ থেকে হাদিসটি  শুনেছি। কিন্তু, আমরা জানি এই হাদিসটি হাসান বস্রীও জানেন। চলো, তাঁর কাছে যাই।আগে কখনো তারা এই ধরণের কথা শুনেনি। খুবই আশ্চর্যজনক।

তাই তারা  চাচ্ছিলেন ব্যাপারটা যাচাই করতে যে দেখা যাক হাসান বস্রীও একই হাদিস বর্ণনা করে কিনা। তারা হাসান বস্রীকে খুঁজতে লাগলেন এবং তাকে খুঁজে পেলেন।(فَأَتَيْنَاهُ فَسَلَّمْنَا عَلَيْهِ ) “তো, আমরা তাঁর কাছে এলাম এবং তাঁকে সালাম দিলাম।” فَأَذِنَ لَنَا – তিনি “আমাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দিলেন।” আমরা তাঁকে বললাম, হে সাঈদের পিতা! جِئْنَاكَ مِنْ عِنْدِ أَخِيكَ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ – “আমরা আপনারই ভাই আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর নিকট হতে আপনার কাছে আসলাম।” فَلَمْ نَرَ مِثْلَ مَا حَدَّثَنَا فِي الشَّفَاعَةِ – “শাফাআত বিষয়ে তিনি যেমন বর্ণনা দিয়েছেন, তেমনটা বর্ণনা করতে আমরা আর কাউকে দেখিনি।” فَقَالَ هِيهْ – তিনি বললেন, হুম। হ্যাঁ, তোমরা তা জানো। فَحَدَّثْنَاهُ بِالْحَدِيثِ – “আমার কাছে সেটি বর্ণনা করো ।”দেখি, তোমরা আনাসের কাছ থেকে কী শুনেছো।

 তো, তারা তাঁর নিকট সম্পূর্ণ হাদিসটি বর্ণনা করে শুনালেন।  فَانْتَهَى إِلَى هَذَا الْمَوْضِعِ – আমরা এই পর্যন্ত অর্থাৎ তিনবার রাসূল (স) এর সুপারিশের কথা বলে শেষ করলাম। فَقَالَ هِيهْ – তিনি বললেন, আরো বর্ণনা করো। আর কী আছে? فَقُلْنَا لَمْ يَزِدْ لَنَا عَلَى هَذَا – আমরা বললাম, তিনি তো এর অধিক আমাদের কাছে বর্ণনা করেননি। তিনি আমাদের এতোটুকুই বলেছেন। 

এখন হাসান কথা বলছেন – فَقَالَ لَقَدْ حَدَّثَنِي وَهُوَ جَمِيعٌ مُنْذُ عِشْرِينَ سَنَةً – তিনি অর্থাৎ আনাস (রা) আমার কাছে এই হাদিস বর্ণনা করেছেন যখন তিনি যুবক ছিলেন, বিশ বছর আগে।( فَلاَ أَدْرِي أَنَسِيَ أَمْ كَرِهَ أَنْ تَتَّكِلُوا ) আমি নিশ্চিত না তিনি কি বাকিটুকু ভুলে গেলেন নাকি তিনি তোমাদের বাকিটুকু বলেননি কারণ তোমরা তাহলে অলস হয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, এই হাদিসের চতুর্থ একটি অংশ আছে। আর আমি নিশ্চিত নই তোমাদের বলা উচিত কিনা। কারণ, তাঁর বয়স এখন বিশ বছর বেশি হয়তো তাঁর স্মরণশক্তি ঐভাবে কাজ করছে না। কিন্তু, আমার সন্দেহ তিনি তোমাদের বলেননি কারণ তোমরা এতে অলস হয়ে পড়বে। قُلْنَا يَا أَبَا سَعِيدٍ فَحَدِّثْنَا – তারা বলল, হে আবু সাইদ! আপনি কি আমাদের বলতে পারেন? আমরা আসলেই জানতে চাই। فَضَحِكَ – তিনি হাসতে শুরু করলেন। وَقَالَ خُلِقَ الإِنْسَانُ عَجُولاً – তিনি কুরআনের একটি আয়াত উল্লেখ করে বললেন, মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে তাড়াহুড়োপ্রবণ করে। তারা কোন জিনিস তাড়াতাড়ি  পেতে চায়। مَا ذَكَرْتُهُ إِلاَّ وَأَنَا أُرِيدُ أَنْ أُحَدِّثَكُمْ حَدَّثَنِي كَمَا حَدَّثَكُمْ بِهِ – আমি তো বর্ণনার উদ্দেশেই তোমাদের কাছে বিষয়টি উল্লেখ করলাম। 


আমি তোমাদের বলবো। বিশ বছর পূর্বে তিনি আমার কাছে যেভাবে বর্ণনা করেছেন সেভাবে বর্ণনা করবো। قَالَ ثُمَّ أَعُودُ الرَّابِعَةَ – তিনি তোমাদের কাছে যা বলেছেন তা সত্য। তিনি আরও বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, এরপর আমি চতুর্থবারের মত ফিরে আসবো। فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ – এবং সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করব যে বাক্যগুলো আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন, যা অন্য কোন সৃষ্টিকে এর পূর্বে দেওয়া হয়নি। ثُمَّ أَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا – এবং সিজদায় পড়ে যাবো। فَيُقَالُ يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ – তখন বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। وَقُلْ يُسْمَعْ – বল, তোমার কথা শোনা হবে। وَسَلْ تُعْطَهْ – চাও, দেয়া হবে। وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ – শাফাআত কর, গ্রহণ করা হবে।(the day of judgement in islam)


এই সময়ে এসে এতোটুকুর চেয়ে ছোট ঈমানও আর অবশিষ্ট নেই। সকল সম্ভাব্য ঈমান ওয়ালাদের মুক্তি হয়ে গেছে। ‘আদনা আদনা মিস কালা হাব্বা’ সবাই মুক্তি পেয়ে গেছে। فَأَقُولُ يَا رَبِّ ائْذَنْ لِي فِيمَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ – এখন রাসূল (স) উম্মাতি বলেননি।  তিনি বলেছেন – হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তাদের সম্পর্কে শাফাআত করার অনুমতি দান করো, যারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ গ্রহণ করেছে। 

 فَيَقُولُ وَعِزَّتِي وَجَلاَلِي وَكِبْرِيَائِي وَعَظَمَتِي – আল্লাহ বলবেন, আমি আমার কর্তৃত্বের শপথ করছি, আমি আমার স্বীয় গৌরবের শপথ করছি, আমি আমার স্বীয় বড়ত্বের শপথ করছি, আমি আমার স্বীয় মহত্ত্বের শপথ করছি, لأُخْرِجَنَّ مِنْهَا مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ – আমি স্বয়ং অবশ্যই তাদের সবাইকে জাহান্নাম থেকে বের করবো, যারা বলেছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ । তোমার এই সুপারিশের কারণে।


আলোচনাটি শুরু করেছিলাম জাহান্নাম কতটা ভয়ংকর তার একটি ছোট্ট নমুনা দিয়ে আর সবশেষে রাসূল (স) আমাদের জন্য এই শাফাআত করছেন।এই হাদিসটি অন্যতম শক্তিশালী একটি হাদিস এবং অন্যতম ভুলভাবে ব্যবহার করা একটি বক্তব্য, রাসুলুল্লাহ (স) এর। কখনোই এর অপব্যবহারের কথা চিন্তাও করবেন না। এটা কখনই ফ্রি হয়ে যাওয়ার লাইসেন্স নয়।যদি আমরা মনোযোগের সাথে পড়ি তাহলে বুঝবো,  আল্লাহ তাঁর রাসূল (স) কে এমন মানুষদের জাহান্নাম থেকে বের করে আনার অনুমতি দিয়েছেন, যাদের ঈমান যথেষ্ট ছিলো না, যথেষ্ট সৎকাজ ছিল না।

পক্ষান্তরে, অনেক মানুষ এমন থাকবে যাদের অন্তরে ঈমান আছে, যাদের ডান হাতে সৎকাজ আছে। আর বিচারের দিন এই সৎকাজগুলো  আলোতে পরিণত হবে, হৃদয়ের ঈমানও বিচারের দিন জ্যোতিতে পরিণত হবে। يَسْعَىٰ نُورُهُم بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِم – তাদের বুকের ভেতর থেকে আলো ছুটতে থাকবে এবং তাদের ডান হাত থেকে।(৫৭:১২)

এই আলো টর্চে পরিণত হবে, গাড়ির হেডলাইটের মতো। চারপাশ থাকবে অন্ধকারাচ্ছন্ন। আর আপনি জান্নাতের দিকে ছুটে চল্‌ছেন। আপনাকে অতিক্রম করে যেতে হবে 'জাহান্নাম' । وَإِن مِّنكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا – এটা আল্লাহর নির্দেশ, জান্নাতে যেতে হলে সবাইকে জাহান্নাম অতিক্রম করে।(১৯:৭১)



মানুষ যখন হেঁটে যাচ্ছে, অনেকের তখন এতো পরিমাণ আলো থাকবে যেন মক্কা থেকে সিরিয়া দেখা যাচ্ছে। আবার কারো  আলো এতো অল্প পরিমাণ থাকবে যে, তারা কোনোমতে পায়ের সামনের কিছু অংশ দেখতে পাবে। কারণ তাদের ঈমান ছিল দুর্বল।

কিন্তু এই হাদিস এমন মানুষদের সম্পর্কে নয় যাদের অনেক বেশি আলো থাকবে বা সামান্য কিছু আলো থাকবে।এই হাদিস হচ্ছে এমন মানুষদের সম্পর্কে যাদের আলো এতো স্বল্প পরিমাণ যে, এটি দিয়ে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

আর যাদের আলো আছে তারা আল্লাহর কাছে ভিক্ষা করতে থাকবে, رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا – আমাদের আলোকে পূর্ণ করে দিন।(৬৬:৮)  জান্নাতের গেইটে আমাদেরকে পৌঁছিয়ে দিন। এবং আমাদের ক্ষমা করে দিন।

আল্লাহর কাছে আমরা ভিক্ষা চাচ্ছি যেনো তিনি আমাদের কপালে রাসূলুল্লাহ (স) এর শাফায়াৎ জুড়ে দিন।  আল্লাহর কাছে আমরা ভিক্ষা চাচ্ছি তিনি যেন আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন যারা আরশের ছায়ায় থাকবে। আল্লাহর কাছে আমরা  প্রার্থনা করছি, তিনি যেনো আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন যাদের এমনকি জাহান্নামের আগুনের ঠাণ্ডা বাতাসও স্পর্শ করবে না। 

.....সমাপ্ত.....

১ম পর্বের লিংক

উৎসঃ বিচার দিবসে আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম — নোমান আলী খান

Post a Comment

0 Comments