বিচার দিবস || The Day of Judgement
ইসলাম ধর্ম হলো সত্য ধর্ম। আর সত্য যেমন সুখবর প্রদান করে তেমনি সাবধানবাণীও প্রদান করে। আমাদের সকল নবী রাসূলদের বিশেষ করে মহানবী (সঃ) কে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা বর্ণনা করেছেন “মুবাসশিরান ওয়া নাজিরান” হিসেবে। অর্থাৎ সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী।আপনি যদি কাউকে শুধু সুসংবাদ প্রদান করেন তাহলে দেখবেন সে সাবধানবাণীর কথা ভুলে যাবে। আর যদি শুধু তাকে সতর্ক করতে থাকেন তাহলে দেখবেন সে এতোই হতাশ হয়ে পড়ে যে মনে করে ভালো খবর বলতে কিছু নেই।এই ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করে আজকের আলোচনা শুরু করছি যার শেষ অংশে রয়েছে আশার খবর।তবে শুরু করছি এমন একটা জায়গা থেকে যা অতটা আশাব্যঞ্জক নয়।
আমাদের যেমন কুরআন রয়েছে আমাদের পূর্বের জাতি বনী ইসরাইলকেও অন্য কিতাব দেওয়া হয়েছিল। কুরআন যাকে বর্ণনা করেছে অন্য কুরআন হিসেবে, অর্থাৎ আগের কিতাব। বনী ইসরাইলরা তাদের কিতাবকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেনি। তাদের মধ্যে বেশ কিছু বিভ্রান্তিমূলক ধারণা গড়ে উঠেছিলো।
আমরা অনেকেই মনে করি যে ,যদিও আমরা এতো ভালো মুসলমান নই, সমস্যা নেই । সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে আল্লাহ যদি আমাদের জাহান্নামে ফেলেনও, এটা হবে সাপ্তাহিক ছুটির মত কয়েক দিন মাত্র। কারণ তিনি আমাদের এতোই ভালবাসেন যে মুসলমানরা শেষমেশ তো জান্নাতে যাবেই। তাই, আমরা যদিও জাহান্নামে যাই সেটা হবে অল্প কিছু দিনের জন্য। لَن تَمَسَّنَا النَّارُ إِلَّا أَيَّامًا مَّعْدُودَةً - “‘গুটি কয়েক দিন ছাড়া আগুন কক্ষনো আমাদেরকে স্পর্শ করবে না’।” (২:৮২)
আসলে
ব্যাপারটা হল,জান্নাত জাহান্নামের পূর্বে রয়েছে বিচার দিবস। আর বিচার
দিবস, যেটি হবে
একদিনের জন্য ।আল্লাহর কথা অনুযায়ী দিনটি ৫০ হাজার বছর লম্বা হবে। জান্নাত
বা
জাহান্নাম নয়, শুধু বিচারের দিনটি হবে এত লম্বা । আর এই দিনটি হবে
মাত্র একদিনের। আর জান্নাত জাহান্নাম হচ্ছে চিরকালের জন্য। তাই যখন কেউ বলে
গুটি কয়েক দিন, তাকে তা এখনকার দিনের হিসেবে চিন্তা করলে তো হবে না।
বর্তমানে,
পৃথিবী তার অক্ষ বরাবর ঘুরে আর আমরা সূর্যের উদিত হওয়া এবং অস্ত যাওয়া
দেখি। কিন্তু, কিয়ামতের দিন চাঁদ ,সূর্য এবং পৃথিবী সবকিছুকে ধ্বংস করে
দিয়ে
নতুন একটি ব্যবস্থাপনা তৈরি করা হবে। তাই, এখন আমরা যেভাবে ২৪ ঘণ্টা হিসেব
করি সেভাবে রাত দিনের হিসেব করলে তো চলবে না, যখন আখিরাত শুরু হবে। তাহলে
সবার আগে আমাদের মাথা থেকে এই
ধারনাটি ফেলে দিতে হবে।(the day of judgement in islam)
Read More
- 5 Best Mini Oven For Baking | Mini Toaster Oven | Countertop Oven For Baking
- Best Hamilton Beach Toaster Ovens, Researched and Reviewed | Hamilton Beach Countertop Oven
- Which Oster Toaster Oven is Best For You? | 4 Oster Countertop Ovens review
কুরআনের বহু জায়গায় জাহান্নাম সম্পর্কে
আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু কুরআন থেকে জাহান্নামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি
বর্ণনা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হলো যা থেকে আমি মনে করি জাহান্নাম
সম্পর্কে জানার শুরু হবে। কুরআনের এই আয়াতটি শুরু হয়েছে এই কথা বলে – وَلَئِن مَّسَّتْهُمْ 'যদিও' আমরা যখন বাংলায় বলি- 'যদি আমি সেখানে যাই তাহলে তোমার সাথে দেখা হবে।' কিন্তু যখন কেউ বলে- 'যদিও
আমি যাই'… এর মানে হল, যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই আয়াতটি 'যদিও' দিয়ে
শুরু হওয়ার মাধ্যমে এমন কিছু ঘটার সম্ভাবনাকে কমিয়ে দিয়েছে। এভাবে বলার
মাধ্যমে আল্লাহ তা'য়ালা কোন কিছুর উপর জোর কমিয়ে দেন। সহজ কথায়, আল্লাহ বাক্যটিকে
দুর্বল করে দিচ্ছেন। 'যদিও'... যদিও কী? 'যদিও…মাসসাতহুম' 'যদিও এটা তাদের
স্পর্শ করে।' আরবিতে 'মাসসা' অর্থ কোন কিছু যখন আপনাকে সামান্যতম স্পর্শ
করে। যেমন-যখন কোন মাছি কোনোমতে স্পর্শ করে। যদি তা সেকেন্ডের জন্য স্পর্শ
করে তখন তাকে ‘মাস’ বলা হয়।(hadith on the day of judgement)
সুতরাং, এটা যদি কোনোমতে তাদেরকে স্পর্শ করে, এক সেকেন্ডের জন্য…
'মাসসাতহুম'। এখন, কী তাদের স্পর্শ করে? আল্লাহ বলেছেন,
نَفْحَةٌ 'একটা হালকা বাতাস যদি তাদের স্পর্শ করে।'
আরবিতে 'নাফহাতুন' বলতে বুঝায়,যখন
দরজা বন্ধ করলে সামান্য একটু বাতাস এসে পড়ে, পর্দা নড়ে উঠে। এই বাতাসের (যা বাহির থেকে ভেতরে আসে
বা ভেতর থেকে বাহিরে যায়) দুইটি ধরন আছে। প্রথমটি হলো- 'লাফহা' (লাম যোগে), দ্বিতীয়টি হলো, 'নাফহা' (নুন যোগে)। লাম যোগে 'লাফহা' মানে বাতাসটি গরম। আর নুন
যোগে 'নাফহা' মানে বাতাসটি ঠাণ্ডা।
আল্লাহ তা'য়ালা বলছেন, "এমনকি যদি ঠাণ্ডা বাতাস তাদেরকে স্পর্শ করে তোমার প্রতিপালকের শাস্তি থেকে।"
তিনি
এই আয়াতে জাহান্নাম কাউকে স্পর্শ করার কথা বলছেন না, আগুন কাউকে স্পর্শ
করার কথা বলছেন না , এমনকি তিনি এখানে গরম বাতাস কাউকে স্পর্শ করার কথা
বলছেন না। তিনি আগুনের ঠাণ্ডা অংশের কথা বলছেন, আর এটা আপনাকে চিরকালের
জন্য স্পর্শ করছে না।(what will happen on the day of judgement)
অন্য কথায়, এখনো তারা জাহান্নামে প্রবেশ করেনি। তারা জাহান্নামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আর জাহান্নামের অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা বাতাস কোনোমতে এসে তাদেরকে স্পর্শ করল। তখন তারা চিৎকার করে বলে উঠবে-
ইয়া অইলানা! হায়! সবচেয়ে কঠিনতম শাস্তি আমাদের জন্য শুরু হয়ে গিয়েছে! আমরা সবসময় সবসময় সবসময় অপরাধী ছিলাম।(২১:৪৬)
তারা সাথে সাথে তাদের সব অপরাধ স্বীকার করবে। এই আয়াতে আল্লাহ জাহান্নামের শাস্তির কথা বর্ণনা করছেন না।আল্লাহ এখানে বর্ণনা করছেন- এমনকি জাহান্নামের আগুনের কাছে গেলে এবং ক্ষণিকের জন্য এর বাতাসের সামান্য স্পর্শ লাগলে একজন মানুষ চিন্তা করা শুরু করবে যে এর চেয়ে আর ভয়ঙ্কর কোনো শাস্তি হতে পারে না। (day of judgement in quran)
এজন্যই আল্লাহ তা'য়ালা দোজখের আগুন সম্পর্কে বলেছেন-
اِنَّہَا سَآءَتۡ مُسۡتَقَرًّا وَّ مُقَامًا
নিশ্চই তা অবস্থানস্থল ও আবাসস্থল হিসেবে অত্যন্ত নিকৃষ্ট। (২৫:৬৬)
অর্থাৎ, অল্প এবং বেশি যে কোন সময়ের জন্য এটা কত নিকৃষ্ট জায়গা!
তাই এক
সেকেন্ডের জন্যেও এটা ভাববেন না যে, আমি তো খারাপ, আল্লাহ যদি আমাকে
জাহান্নামে ফেলেনও,তারপরও এক সময় তো এখান থেকে মুক্তি পাবো। এই ধরনের চিন্তাকে
কখনো প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। চলবে......
শেষ পর্বের লিংক
0 Comments