
সূরা বাকারার ২৪ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
فَاِنۡ لَّمۡ تَفۡعَلُوۡا وَلَنۡ تَفۡعَلُوۡا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِیۡ وَقُوۡدُہَا النَّاسُ وَالۡحِجَارَۃُ ۚۖ اُعِدَّتۡ لِلۡکٰفِرِیۡنَ
আর যদি তা না পার-অবশ্য তা তোমরা কখনও পারবে না, তাহলে সে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা কর, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফেরদের জন্য।
এখানে প্রশ্ন হতে পারে মানুষ মহান আল্লাহ তা'য়ালাকে অবিশ্বাস করে, খারাপ কাজ করে, তাই তারা জাহান্নামে যাবে কিন্তু পাথর কি অপরাধে জাহান্নামে যাবে?
কেননা আমরা জানি, সবকিছুই মহান আল্লাহ তা'য়ালার ইবাদাত করে।পবিত্র কুরআনে সূরা বনী-ইসরাঈলের ৪৪ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
تُسَبِّحُ لَہُ السَّمٰوٰتُ السَّبۡعُ وَالۡاَرۡضُ وَمَنۡ فِیۡہِنَّ ؕ وَاِنۡ مِّنۡ شَیۡءٍ اِلَّا یُسَبِّحُ بِحَمۡدِہٖ وَلٰکِنۡ لَّا تَفۡقَہُوۡنَ تَسۡبِیۡحَہُمۡ ؕ اِنَّہٗ کَانَ حَلِیۡمًا غَفُوۡرًا
সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যে যাকিছু আছে সমস্ত কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। এবং এমন কিছু নেই যা তার সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করে না। কিন্তু তাদের পবিত্রতা, মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না। নিশ্চয় তিনি অতি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।
অর্থাৎ আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবকিছুই আল্লাহ তা'য়ালার ইবাদত করছে কিন্তু আমরা তাদের ইবাদত বুঝতে পারছি না।
আবার মহান আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআনে সূরা নিসার ৪০ নাম্বার আয়াতে বলেছেন, 'আল্লাহ তা'য়ালা কারো উপর অনু পরিমাণও জুলুম করেন না'।তাহলে কেন আল্লাহ তা'য়ালা পাথরকে জাহান্নামে দিবেন? আল্লাহ তা'আলা কি পাথরের উপর জুলুম করছেন না?
আসলে মহান আল্লাহ তা'য়ালা যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন তাকে সে কাজে ব্যবহার করলে তা কখনো তার জন্য শাস্তির বিষয় হয় না। তাছাড়া পাথরের উপর শরীয়াতের এমন কোনো বিধান আরোপিত করা হয়নি যে তার অবাধ্যতার কারণে তাকে শাস্তি স্বরূপ জাহান্নামের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
পবিত্র কুরআনে 'হিজারাহ (حِجَارَۃُ)' বলতে গন্ধকের একপ্রকার বিশেষ পাথরকে বুঝানো হয়েছে যার রং অতি কালো,যা আকারে বৃৃৃহৎ এবং অত্যন্ত দুর্গন্ধময়।
হযরত ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, এই পাথরগুলো আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথম আকাশে সৃষ্টি করা হয়েছে।( তাফসীর-ই-ইবনে জারীর, মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিম, মুস্তাদরিক-ই-হাকিম)
হযরত ইবনে মাসউদ (রা), হযরত ইবনে আব্বাস (রা) এবং অন্যান্য কয়েকজন সাহাবী (রা) হতে সুদ্দী (র) নকল করেছেন যে, দোযখের মধ্যে এই কালো গন্ধকের পাথরও থাকবে যার কঠিন আগুন দ্বারা কাফেরদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে।
হযরত মুজাহিদ (র) বলেন, এই পাথরগুলোর দুর্গন্ধ মৃতদেহের দুর্গন্ধের চেয়েও বেশি কঠিন। মোহাম্মদ আলী (র) এবং ইবনে জুরাইও (র) বলেন যে, গন্ধকের অর্থ হচ্ছে বড় বড় ও শক্ত শক্ত পাথর।
কাজেই এই পাথর জাহান্নামের জন্য আলাদাভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে।যার আগুন হবে অত্যন্ত উত্তপ্ত এবংযা হবে অতি দুর্গন্ধময়, যাতে জাহান্নামীরা আরো বেশি কষ্ট পায়।এই পাথর পৃথিবীর এই সাধারন পাথর নয় আর আমি পূর্বেই বলেছি মহান আল্লাহ তা'য়ালা যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন তাকে সে কাজে ব্যবহার করলে তা কখনো তার জন্য শাস্তির বিষয় হয় না। এই পাথর হচ্ছে জাহান্নামের একটি অংশ।
কেউ কেউ বলেছেন, এটা হতে উদ্দেশ্য হচ্ছে ওই পাথরগুলো যেগুলো দিয়ে মূর্তি বানানো হতো, যাদেরকে আল্লাহ তা'য়ালার অংশীদার করে ইবাদত করা হতো। মুশফিকরা যাতে বুঝতে পারে, তারা যেসব মূর্তির উপাসনা করেছে সেগুলো আজ তাদের কোন উপকার করা তো দূরের কথা বরং তাদের সাথে জাহান্নামে জ্বলছে। যেমন সূরা আল আম্বিয়া ৯৮ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
اِنَّکُمۡ وَمَا تَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ حَصَبُ جَہَنَّمَ ؕ اَنۡتُمۡ لَہَا وٰرِدُوۡنَ
তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের পুজা কর, সেগুলো দোযখের ইন্ধন। তোমরাই তাতে প্রবেশ করবে।
0 Comments