اِنَّ الدِّیۡنَ عِنۡدَ اللّٰہِ الۡاِسۡلَامُ(নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম।)
একমাত্র ধর্ম, একমাত্র জীবনদর্শন, যা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য তা হচ্ছে ইসলাম অর্থাৎ আল্লাহ তা'য়ালার কাছে আত্মসমর্পণ করা। হযরত আদম (আ) থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ (স) পর্যন্ত যত নবী রাসূলগণ পৃথিবীতে এসেছেন সবাই মানব জাতিকে একটি শিক্ষাই দিয়ে গেছেন, আর তা হচ্ছে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা।আরবি ভাষায়, যদি কেউ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেন তাহলে তাকে মুসলিম বলে।
যুগে যুগে পৃথিবীতে আল্লাহ তা'য়ালা মানব জাতির জন্য দিকনির্দেশনা পাঠিয়েছেন যেটাকে আমরা বলি আসমানী কিতাব। এই কিতাব অবতীর্ণ হতো একজন নবীর উপর।সৃষ্টির প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ) কে আল্লাহ তা'য়ালা পৃথিবীতে প্রেরণ করে সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দিয়ে দিয়েছিলেন।
পবিত্র কুরআনে সূরা বাকারার ৩৮ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে,
আমি হুকুম করলাম, তোমরা সবাই নীচে নেমে যাও। অতঃপর যদি তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত পৌঁছে, তবে যে ব্যক্তি আমার সে হেদায়েত অনুসারে চলবে, তার উপর না কোন ভয় আসবে, না (কোন কারণে) তারা চিন্তাগ্রস্ত ও সন্তপ্ত হবে।
আল্লাহ তা'আলা হযরত আদম (আ) কে তাওহীদের শিক্ষা দিয়েছিলেন, এমনকি প্রত্যেক নবীর শিক্ষারই মূল কথা হল তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদ।কিন্তু শয়তান ও নফস মানুষকে সরল পথ থেকে বিচ্যুত করে পাপের পথে নিয়ে যায়।
হযরত নূহ (আ) এর আগমনের পূর্বে কয়েকজন সৎ ও পুণ্যবান ব্যক্তি ছিলেন ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াউক, ইয়াগুস, নাসর।তারা মারা যাওয়ার পর মানুষ তাদের কবরের উপর মসজিদ নির্মান করে তাদের ছবি সেখানে রেখে দেয়।যাতে তাদের অবস্থা ও ইবাদতের কথা তারা স্মরণ রাখতে পারে এবং সেভাবে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে পারে। শয়তানের প্ররোচনায় কালক্রমে সেখানে তাদের ছবির পরিবর্তে মূর্তি স্থাপন করা হল এবং মানুষ আল্লাহর পরিবর্তে সে মূর্তিগুলোর উপাসনা শুরু করল।
যখন মূর্তিপূজা বেড়ে গেল তখন আল্লাহ তা'আলা হযরত নূহ (আ) কে পৃথিবীতে প্রেরণ করলেন। তিনিও তাওহীদের দাওয়াত দিতে থাকলেন কিন্তু তাঁর এই দীর্ঘ দাওয়াতে খুব কম মানুষই ঈমান আনল। হযরত নূহ (আ) কে আল্লাহ তা'আলা নির্দেশ দিলেন নৌকা তৈরি করতে।নূহ (আ) এবং ঈমানদার ব্যক্তিরা নৌকাতে উঠলেন এবং আল্লাহ তা'আলা তাদের রক্ষা করলেন, আর বাকিদের তুফানে ডুবিয়ে দিলেন।
কিছুকাল পর হযরত নূহ (আ) এর পুত্র সাম এর বংশধর 'আদ জাতি' অবাধ্যতায় লিপ্ত হলো। আল্লাহ তা'আলা তাদের নিকট হূদ (আ) কে প্রেরণ করেন। পবিত্র কুরআনে সূরা ফুসসিলাত এর ১৫ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে,
যারা ছিল আদ, তারা পৃথিবীতে অযথা অহংকার করল এবং বলল, আমাদের অপেক্ষা অধিক শক্তিধর কে? তারা কি লক্ষ্য করেনি যে, যে আল্লাহ তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের অপেক্ষা অধিক শক্তিধর ? বস্তুতঃ তারা আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করত।
এভাবে মানুষ বারবার অবাধ্য হয়েছে এবং আল্লাহ তা'আলা তাদের সঠিক দিক নির্দেশনার জন্য নবী-রাসূলগণ পাঠিয়েছেন। সব নবীগণই তাওহীদ ও রিসালাতের শিক্ষা দিয়েছেন, মানুষকে সত্যের দাওয়াত দিয়েছেন। অর্থাৎ মানুষ সৃষ্টির পর থেকে আল্লাহ তা'আলা মানুষকে একটি ধর্মই শিক্ষা দিয়েছেন। বাকি ধর্মগুলোর কিছু মানব রচিত আর কিছু আসমানী কিতাবের বিকৃত রূপ।
আজ থেকে দশ হাজার বছর পূর্বের মানুষের জীবনব্যবস্থা এত আধুনিক ছিল না।তখন মানুষের জীবনব্যবস্থা অন্যরকম ছিল। তাদের সমাজব্যবস্থা, রীতিনীতি যেরকম ছিল আল্লাহ সেরকম আইন দিয়ে নবী প্রেরণ করেছেন।যেমনঃ হযরত আদম (আ) এর সময়ে অন্য কোন পরিবার না থাকায় ভাই বোনের মধ্যে বিবাহ বৈধ ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে যখন এই নীতির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায় তখন তা বাতিল করা হয়।নবীর মৃত্যুর পরে মানুষ যখন একটি নিয়মে অভ্যস্ত হয়ে পড়তো এবং নিজেরাই কিছু আইন পরিবর্তন করে ফেলতো তখন আল্লাহ পুরাতন আইনের কিছু বাদ দিয়ে এবং নতুন কিছু আইন সংযোজন করে নতুন নবী প্রেরণ করেছেন। অনেকেই তা গ্রহণ না করে পুরাতন ধর্মকে আঁকড়ে রেখেছিলো। যার ফলে ধর্মের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
যখন মূসা (আ) কে আল্লাহ বনী ইসরাইলের কাছে প্রেরণ করলেন নবী হিসেবে তখন তাঁকে প্রসিদ্ধ চারখানা কিতাবের একটি কিতাব দিয়েছিলেন যার নাম 'তাওরাত'।মূসা (আ) কে এই তাওরাত দেওয়া হয়েছিল তার কওমকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য। কিছু লোক এই তাওরাতের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং মূসা (আ) কে নতুন নবী হিসেবে গ্রহণ করেছিল কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষ এই তাওরাতেও পরিবর্তন আনে।যার ফলে তাওরাত কিতাব বিকৃত হয়ে যায়।
তারপর আল্লাহ তা'য়ালা নতুন নবী হিসেবে হযরত ঈসা (আ) কে প্রেরণ করেন এবং তার উপর 'ইঞ্জিল' কিতাব নাযিল করেন। যখন তিনি পৃথিবীতে আসলেন তখন কিছু লোক তাঁকে নবী হিসেবে মেনে নিয়েছিল আবার কিছু লোক বিকৃত তাওরাতকে আঁকড়ে ধরেছিল।ফলে ইহুদী ও খৃষ্টান নামের দুটি আলাদা ধর্মের সৃষ্টি হয়।
আবার যখন ইঞ্জিলকে মানুষ বিকৃত করে ফেলে তখন আল্লাহ তা'আলা নতুন নবী হযরত মুহাম্মদ (স) কে চূড়ান্ত নবী হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন এবং তাঁর উপর চূড়ান্ত কিতাব কুরআন নাযিল করেন। একইভাবে কিছু মানুষ মুহাম্মদ (স) কে নবী হিসেবে গ্রহণ করে আবার কিছু মানুষ পূর্বের বিকৃত কিতাবের অনুসারী রয়ে যায়।ফলে সৃষ্টি হয় ইহুদী, খৃষ্টান ও ইসলাম নামের আলাদা তিনটি ধর্মের।
এভাবে সৃষ্টির শুরু থেকে যে সকল নবী-রাসূলগণ এসেছিলেন তাদের মধ্যেও একি ধারা চলতে থাকে।কেউ নতুন ধর্ম গ্রহণ করেছিল আবার কেউ আগের ধর্মকে আঁকড়ে ধরেছিল। এভাবে আলাদা আলাদা ধর্ম সৃষ্টি হতে হতে পৃথিবীতে এখন প্রায় সাড়ে চার হাজারেরও বেশি ধর্মের সৃষ্টি হয়ে গেছে। যদি সৃষ্টির শুরু থেকে সবাই নতুন নবী এবং নতুন কিতাবকে গ্রহণ করতো তাহলে আজ পৃথিবীতে এত ধর্মের সৃষ্টি হতো না বরং একটি ধর্মই এই পৃথিবীতে থাকতো।
0 Comments